ত্বকের অ্যালার্জি | কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানেন কি?
ত্বকের অ্যালার্জি | কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানেন কি?
ত্বকের অ্যালার্জি সম্পর্কে সঠিক ধারণা অনেকেরই নেই। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তাই অ্যালার্জি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে বুঝে এর প্রতিকার করা প্রয়োজন। আসুন, এর কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
ত্বকের অ্যালার্জি হওয়ার কারণ
১. অ্যালার্জিক বিক্রিয়া
ফুলের পরাগ, দূষিত বাতাস, ধোঁয়া, কাঁচা রঙের গন্ধ, চুনকাম, ঘরের ধুলো এবং পুরনো ফাইলের ধুলো দেহে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোল (part-1)
২. দুধে অ্যালার্জি
খাদ্যের কারণে অ্যালার্জির ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে গরুর দুধে অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এটি শরীরে চুলকানির মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও গম, ডিম, মাছ, বাদাম, কলা, আপেল, আঙ্গুর, ব্যাঙের ছাতা, পেঁয়াজ, রসুন, চকোলেট এবং ঠাণ্ডা পানীয় কিছু মানুষের মধ্যে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
৩. ঘাম ও ঘরের ধুলো
গরমে ঘাম এবং ঘরের ধুলো অ্যালার্জির অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই যারা অ্যালার্জির সমস্যায় ভুগছেন, তাদের সবসময় ঘরের ধুলো এড়িয়ে চলা উচিত। বিশেষ করে ঘর ঝাড়ু দেওয়ার সময় সেই স্থান থেকে দূরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। ঘরের আসবাবপত্র, যেমন কম্বল, পর্দা, তোষক, বালিশ ইত্যাদিতে জমে থাকা ধুলো পরিষ্কার করার সময়ও সতর্ক থাকতে হবে এবং সম্ভব হলে দূরে সরে থাকতে হবে।
৪. ছত্রাক
নোংরা ও ভেজা পরিবেশে ছত্রাক জন্মাতে পারে। এছাড়া কিছু খাবার, যেমন পনির, কেক, পাউরুটি, আলু এবং পেঁয়াজ ছত্রাক দ্বারা দূষিত হতে পারে। এই ছত্রাক অ্যালার্জি সৃষ্টির একটি প্রধান কারণ।
৫. কিট পতঙ্গের কামড়ে
মশা, বেলেমাছি, মৌমাছি, বোলতা এবং ভীমরুলের মতো কীটপতঙ্গের কামড়ে দেহে অ্যালার্জি হতে পারে।
৬. গৃহপালিত পশু থেকে
রোমশ ও পালকযুক্ত জীবজন্তু, যেমন বিড়াল, কুকুর, এবং ঘোড়া প্রভৃতি গৃহপালিত প্রাণী অনেক সময় অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে দায়ী হতে পারে।
৭. আর্টিকেরিয়া
এক ধরনের চর্মরোগ আছে যাকে বলা হয় আর্টিকেরিয়া (urticaria)। এ রোগে ত্বকে চাকা চাকা ফুলে ওঠে এবং তীব্র চুলকানি দেখা দেয়। এটি ত্বকের অ্যালার্জির অন্যতম লক্ষণ। বেশিরভাগ মানুষ তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এই রোগে আক্রান্ত হন। আর্টিকেরিয়া শরীরের নির্দিষ্ট কোনো অংশে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে বা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে ত্বকে বিভিন্ন আকারের লালচে চাকা চাকা ফোলা দাগ হয়, যা প্রচণ্ড চুলকানির সৃষ্টি করে। খাদ্য অ্যালার্জি থেকেও এই রোগ হতে পারে, যেমন বাদাম, ডাল, গোশত, ডিম ইত্যাদি।
৮. ওষুধে অ্যালার্জি
ওষুধের কারণে অ্যালার্জি হতে পারে, এবং অনেক ওষুধই এ সমস্যার জন্য দায়ী। এর মধ্যে পেনিসিলিন (Penicillin) এবং এসপিরিন (Aspirin) অন্যতম। জ্বর, গায়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, পাঁচড়া বা ফোঁড়ার জন্য আমরা অনেক সময় ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এই ওষুধগুলো সেবন করি। তবে মনে রাখতে হবে, এ ধরনের ওষুধের কারণে ত্বকে অ্যালার্জিজনিত চুলকানি হতে পারে। এমনকি পেনিসিলিন ব্যবহারের ফলে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে, যা মৃত্যুর কারণও হতে পারে।এছাড়াও অনেক ওষুধ রয়েছে, যেগুলোর সেবনে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ কখনোই খাওয়া উচিত নয়।
আরো পড়ুনঃ মানবদেহের লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা
৯. টিকা বা ভ্যাকসিন থেকে
১০. অতিরিক্ত মেকআপ
অতিরিক্ত মেকআপ ব্যবহার করলে ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে।
ত্বকের অ্যালার্জি থেকে রক্ষা পেতে করণীয়
১. ত্বক পরিষ্কার
ত্বক পরিষ্কার রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দিনে যতবার সম্ভব মুখে পানির ঝাপটা দিন। কৃত্রিম প্রসাধনী ব্যবহার না করে, প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
২. বেসন ও শসার রস মিশ্রিত পেস্ট
বেসনে শসার রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পরে তা ধুয়ে ফেলুন।
৩. ময়দা ও গোলাপজল এর মিশ্রণ
ময়দার সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন।
৪. লবঙ্গ ও মেথি
লবঙ্গ ও মেথি একসাথে পিষে মিশ্রণটি ব্রণের ওপর লাগিয়ে রাখুন। এটি বিশেষভাবে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী।
৫. ত্বকে বরফ ব্যবহার
বাইরে যাওয়ার আগে ত্বকে ১০ মিনিট বরফ ঘষে নিন।
৬. পাতিলেবুর রস
পাতিলেবুর রস তুলায় ভিজিয়ে ত্বকে দিনে দুইবার লাগাতে পারেন। অতিরিক্ত ঘাম ত্বকের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়, যার ফলে লোমকূপের গোড়ায় জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। ঘাম বেশি হলে দ্রুত মুছে ফেলার চেষ্টা করুন।
৭. নিয়মিত গোসল
নিয়মিত গোসল করুন, পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। পাশাপাশি নিয়মিত ডিওডোরেন্ট ও বডি স্প্রে ব্যবহার করুন।
৮. নিমপাতার রস
৯. অতিরিক্ত মেকআপ থেকে বিরত থাকা
অতিরিক্ত মেকআপ থেকে অ্যালার্জি হতে পারে, তাই মেকআপ সঠিকভাবে পরিষ্কার করাও অত্যন্ত জরুরি। যাদের ত্বকে ব্রণের সমস্যা আছে, তারা মেকআপ তোলার জন্য খুবই মৃদু বা নমনীয় ক্লিনজার ব্যবহার করবেন। বিশেষ করে চোখের মেকআপ তোলার সময় সতর্ক থাকতে হবে, যাতে বেশি ঘষাঘষি না হয়। মেকআপ তোলার পর ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে ত্বকের নমনীয়তা বজায় রাখতে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।
৯. লেবুর রস ও গ্রিন টি
এক মগ পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করে দিন শুরু করুন। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া সকালে কফির পরিবর্তে গ্রিন টি পান করলে ত্বক সুন্দর ও সতেজ থাকবে।
আরো পড়ুনঃ ধূমপান বা তামাক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর
১১. খাদ্য তালিকায় সবজি ও ফলমূল
প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় সবজি ও ফলমূল অবশ্যই রাখতে হবে।
অ্যালার্জি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। বর্তমানে এমন অনেক আধুনিক ওষুধপত্র রয়েছে, যা দ্রুত অ্যালার্জি থেকে হওয়া কষ্ট ও চুলকানি দূর করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ও সঠিক ওষুধের মাধ্যমে অ্যালার্জির রোগী সহজেই সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, অ্যালার্জি যেকোনো সময়, যেকোনো বয়সে এবং যেকোনো ঋতুতে হঠাৎ করেই হতে পারে। তাই যে কারণগুলো অ্যালার্জি সৃষ্টি করে সেগুলো এড়িয়ে চলা এবং অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
উপসংহার
অ্যালার্জির কারণে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো আর্টিকেরিয়া। এতে ত্বকে লালচে চাকা চাকা দাগ দেখা দেয় এবং কখনো সারা শরীর ফুলে যেতে পারে। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অল্পতেই চুলকানি দেখা দেয়, যা অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস নামে পরিচিত। এছাড়া অ্যালার্জিক কন্ট্রাক্ট ডার্মাটাইটিস হলো এমন একটি সমস্যা, যেখানে কোনো কিছুর সংস্পর্শে এলে শরীরের সেই অংশে প্রদাহ দেখা দেয়।
বাচ্চাদের অ্যালার্জিজনিত চর্মরোগ প্রতিরোধে শুরু থেকেই বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। গরমের সময় সুতি কাপড় এবং শীতের সময় ফ্লানেল বা অ্যাক্রিলিক কাপড় ব্যবহার করা উচিত। ত্বক ঘষাঘষি করে গোসল করা যাবে না। গোসলের সময় মৃদু বেবি সোপ ব্যবহার করতে হবে এবং গোসলের আগে-পরে ময়েশ্চারাইজার, অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল লাগাতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাইল্ড স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।
বয়স্কদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মেনে চলা উচিত অ্যালার্জি প্রতিরোধের জন্য।
Comments
Post a Comment