তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা

 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা

আমাদের সকলেরই উচিত শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ১০টি ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকা, তেমনি এর কিছু অপকারিতার ব্যাপারেও সতর্ক থাকা। কারণ, ইন্টারনেটের সঠিক এবং সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে ভবিষ্যতে একটি অন্ধ জাতি তৈরি হতে পারে, যার বোঝা আমাদেরকেই বহন করতে হবে। যেমন আমরা এখন ইন্টারনেট এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে পারি, ঠিক তেমনই ইন্টারনেট আমাদের সুন্দর জীবনটাকেও এক ক্লিকেই ধ্বংস করতে সক্ষম। সুতরাং, সচেতন থাকুন এবং ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করুন।


তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা

তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির বিষয়ে দশটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা

কম্পিউটার ইথিকস ইনস্টিটিউট ১৯৯২ সালে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর দশটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে। সেগুলো হলো:

১. কম্পিউটার ব্যবহার করে অন্যের ক্ষতি করবে না।
২. অন্যের কম্পিউটার সংক্রান্ত কাজে হস্তক্ষেপ করবে না।
৩. অন্যের ফাইলে অনধিকার প্রবেশ করবে না।
৪. চুরি বা অশুদ্ধ উদ্দেশ্যে কম্পিউটার ব্যবহার করবে না।
৫. মিথ্যা তথ্য প্রচারের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করবে না।
৬. লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার ব্যবহার বা কপি করবে না।
৭. বিনা অনুমতিতে অন্যের কম্পিউটার সংক্রান্ত রিসোর্স ব্যবহার করবে না।
৮. অন্যের কাজকে নিজের কাজ হিসেবে চালিয়ে দেবে না।
৯. তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শুরুর আগে সমাজের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে চিন্তা করবে।
১০. কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় অন্যের ভালো-মন্দের কথা বিবেচনা করবে এবং শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন করবে।

সাইবার ক্রাইম কাকে বলে এবং কি কি

কম্পিউটার, ইন্টারনেট বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সময় উপরে বর্ণিত তথ্যপ্রযুক্তির নৈতিক নির্দেশনাগুলোর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক ধরনের অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রচলিত অপরাধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

আরো পড়ুনঃফাস্ট ফুড এবং ফাস্টফুডের অপকারিতা

হ্যাকিং: কোনো কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, বা ডেটার ওপর অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করার প্রক্রিয়াকে হ্যাকিং বলা হয়। এর মাধ্যমে ব্যক্তির তথ্য বা সিস্টেমের ক্ষতি হতে পারে এবং অনেক সময় কোনো ক্ষতি না করেও নিরাপত্তা ত্রুটি সম্পর্কে কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে সতর্ক করা হয়। যারা এই ধরনের অপরাধে জড়িত থাকে, তাদেরকে হ্যাকার বলা হয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা

ফিশিং: ফিশিং হলো ইমেইল বা মেসেজের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীকে নকল বা ফেইক ওয়েবসাইটে নিয়ে গিয়ে তার বিশ্বাস অর্জন করার একটি কৌশল, তারপর ব্যবহারকারীর এক্সেস কোড, পিন নম্বর, ক্রেডিট কার্ড নম্বর, পাসওয়ার্ড, ব্যাংক ডিটেইলস ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে তাদের বিভিন্ন ধরনের বিপদে ফেলা।

স্প্যামিং: অনাকাঙ্ক্ষিত বা অবাঞ্চিত ইমেইল কিংবা মেসেজ পাঠানোকে স্প্যামিং বলা হয়। এই ধরনের কাজ যারা করে, তাদের স্প্যামার বলা হয়। যখন কোনো ব্যবহারকারী কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করেন বা কোনো গ্রুপের মেসেজ বোর্ডে প্রবেশ করেন, তখন স্প্যামাররা সেখান থেকে ইমেইল এড্রেস সংগ্রহ করে এবং ব্যবহারকারীর ইমেইলে বিভিন্ন প্রতারণামূলক বার্তা পাঠায়।

সফটওয়্যার পাইরেসি: সফটওয়্যার হলো একটি বুদ্ধিভিত্তিক প্রযুক্তি, যা প্রোগ্রামাররা তাদের পেশাগত দক্ষতা, মেধা এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে তৈরি করে থাকেন, এবং এগুলোর স্বত্বাধিকারী তারা। লাইসেন্সবিহীনভাবে বা স্বত্বাধিকারী অনুমোদন ছাড়া এই ধরনের সফটওয়্যার কপি করা, নিজস্ব নামে বা কোনো পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করে ব্যবহারের সুযোগ নেওয়া পাইরেসির আওতায় পড়ে।

আরো পড়ুনঃত্বকেরলার্জি | কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানেন কি?

প্লেজিয়ারিজম: কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লেখা, সাহিত্যকর্ম, গবেষণা পত্র, সম্পাদনা কাজ ইত্যাদি হুবহু নকল বা আংশিক পরিবর্তন করে নিজের নামে প্রকাশ করার কাজকে প্লেজিয়ারিজম বলা হয়। সঠিক উৎস উল্লেখ না করে কোনো কিছু রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করাও অবৈধ কাজ এবং এটি প্লেজিয়ারিজমের আওতায় পড়ে।

সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে সাইবার আইন

 সাইবার অপরাধ দমন করার জন্য বিভিন্ন দেশের আইন রয়েছে। আমাদের দেশে ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭(১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক্স মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে যা মিথ্যা, অশালীন বা মানহানিকর এবং যার ফলে কোনো ব্যক্তির ভাবমূর্তি নষ্ট হয় বা উস্কানি প্রদান করা হয়, তবে তাকে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে

পর্নোগ্রাফি আইন ২০১২ অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, মেইল, ফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করে, তবে তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে

এছাড়া, ২০১৮ সালে আমাদের দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণীত হয়, যা নিম্নলিখিত বিধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে:

  • কোনো ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোয় অবৈধভাবে প্রবেশ করে সেই তথ্য ধ্বংস, অকার্যকর করার চেষ্টা বা কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক বা প্রোগ্রাম ধ্বংস করতে পারবেন না।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা
  • ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা কম্পিউটার সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করে সেখানে থেকে কোনো তথ্য বা ডেটার অনুলিপি সংগ্রহ করা যাবে না।
  • ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারণা, জালিয়াতি বা ছদ্মবেশ ধারণ করা যাবে না।
  • রাষ্ট্রের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব বা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, জাতিগত ঘৃণা উস্কানি বা সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার মতো কার্যক্রম ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে করা যাবে না।
ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা, অপমান বা হুমকি প্রদর্শন করা যাবে না।ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক, বীমা বা সরকারি/আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ক্ষতি বা গোপনীয় তথ্য চুরি এবং পাচার করা যাবে না।
উপসংহার

উপরোক্ত বিষয় থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে কী ধরনের অপরাধমূলক কাজ করা সম্ভব এবং এগুলো কতটুকু আইনগতভাবে বৈধ বা বেআইনি। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমাদের সকল তথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। এছাড়া, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে যেসব অপরাধমূলক কার্যক্রম সংঘটিত হতে পারে, সেসব থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সঠিক এবং সুনির্ভর ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাব।

Comments

Popular posts from this blog

বিউটিফুল স্পট কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত(Beautiful spot Cox's Bazar beach)

কফির বীজ সংরক্ষণের উপায়

ছানার জিলাপি তৈরির পদ্ধতি