মানব জীবনে বিদ্যুতের প্রয়োজন-বিদ্যুৎ ব্যবহারের নিয়মাবলী
মানব জীবনে বিদ্যুতের প্রয়োজন-বিদ্যুৎ ব্যবহারের নিয়মাবলী
বিদ্যুতের সাহায্যে রান্না করা যায়, এবং এর ব্যবহারকে সঠিকভাবে বোঝার জন্য আমাদের বিদ্যুৎ বা তড়িৎ শক্তি সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। যদি আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সঠিক ধারণা থাকে, তবে আমরা এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারব, পাশাপাশি অপচয় রোধ করার জন্য সচেতনতা তৈরি করতে সক্ষম হব। এর মাধ্যমে আমরা নিজেরাও সাবধান থাকতে পারব এবং অন্যদেরও বিদ্যুতের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করতে সাহায্য করতে পারব।
ভূমিকা
আমরা আমাদের দৈনন্দিন এবং পেশাগত জীবনে পুরোপুরি বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল এবং অনেক সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের কাজের গতি থেমে যায়। এসময় অনেক সময় আমরা বিকল্প বিদ্যুৎ সাপ্লাই ব্যবহার করি। ঘরের লাইট বা পাখার জন্য এই বিকল্প সাপ্লাই চালু করতে ২১ সেকেন্ড দেরি হলেও সমস্যা হয় না, কিন্তু কম্পিউটার বা অন্যান্য যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে আমরা বড় সমস্যায় পড়তে পারি। এতে কম্পিউটারের তথ্য নষ্ট হতে পারে এবং যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মূল বিদ্যুৎ সাপ্লাই বন্ধ হওয়ার পর বিকল্প সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার প্রক্রিয়া কত দ্রুত করা যায়, তার ওপর নির্ভর করেই আইপিএস (আইনট্রাপ্লেবল পাওয়ার সাপ্লাই) এবং ইউপিএস (আনট্রপ্লেবল পাওয়ার সাপ্লাই) তৈরি করা হয়।
ইলেকট্রিক সার্কিট বা বিদ্যুৎ বর্তনী
দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ কিভাবে ব্যবহার করা হয়, তা বুঝতে হলে আমাদের ইলেকট্রিক সার্কিট বা বিদ্যুৎ বর্তনী সম্পর্কে কিছু মৌলিক ধারণা থাকতে হবে।
আরো পড়ুনঃতথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিকতা
সিরিজে ব্যাটারি সেল: যখন ব্যাটারি সেলগুলো সিরিজে যুক্ত করা হয়, তখন ব্যাটারির বিভব (ভোল্টেজ) যোগ হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি একক ব্যাটারি সেলটির ভোল্টেজ ১.৫ ভোল্ট হয়, তবে দুটি সেল সিরিজে যুক্ত করলে মোট ভোল্টেজ হবে ৩ ভোল্ট, এবং তিনটি সেল যুক্ত করলে ৪.৫ ভোল্ট পাওয়া যাবে।
সমান্তরালে ব্যাটারি সেল: যখন কয়েকটি সেল সমান্তরালভাবে (প্যারালাল) যুক্ত করা হয়, তখন ব্যাটারির বিভব অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু এটি সার্কিটে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ করতে সক্ষম হয় এবং বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে।
সিরিজ সার্কিট: সিরিজ সার্কিটে একটি বাল্ব অনেক উজ্জ্বলভাবে জ্বলবে, তবে দুটি বা তিনটি বাল্ব যুক্ত করলে বিদ্যুৎ প্রবাহ কমে যাবে এবং বাল্বগুলো অনুকূলভাবে জ্বলবে না। এই সার্কিটে একটি সুইচ যুক্ত করা হলে সুইচ বন্ধ করলে সবগুলো বাল্ব একসাথে নিভে যাবে।
সমান্তরাল সার্কিট: সমান্তরাল সার্কিটে যতগুলো বাল্ব লাগানো হোক না কেন, সবগুলোই ব্যাটারি সেলের দুটি প্রান্ত থেকে সমান বিভব পার্থক্য (ভোল্টেজ) পাবে, ফলে সবগুলো বাল্ব একই উজ্জ্বলতায় জ্বলবে। এই সার্কিটে প্রতিটি বাল্বের জন্য আলাদা সুইচ লাগানো যেতে পারে, এবং প্রত্যেকটি বাল্ব আলাদাভাবে জ্বালানো বা নিভানো সম্ভব।
ব্যাটারি সেলের ভোল্টেজ পার্থক্য সবসময় সমান থাকে, তাই এগুলোকে ডিসি (ডাইরেক্ট কারেন্ট) সাপ্লাই বলা হয়। এই সার্কিটে ইচ্ছেমত প্রত্যেকটি বাল্বের জন্য আলাদা সুইচ লাগিয়ে আলাদাভাবে জ্বালানো বা নিভানো সম্ভব। ব্যাটারি সেলের ভোল্টেজ পার্থক্য সমান থাকার কারণে এগুলো ডিসি সাপ্লাই হিসেবে পরিচিত। অপরদিকে, আমাদের বাসায় যে বৈদ্যুতিক সাপ্লাই দেওয়া হয়, তা প্রতি সেকেন্ডে ৫০ বার ধনাত্মক থেকে ঋণাত্মক বিভব পরিবর্তন করে, যা এসি (অল্টারনেটিং কারেন্ট) সাপ্লাই হিসেবে পরিচিত। সাধারণ ব্যাটারি সেলটির ভোল্টেজ পার্থক্য মাত্র ১.৫ ভোল্ট। কিন্তু আমাদের বাসায় বিদ্যুৎ সাপ্লাই প্রায় ২২০ ভোল্ট, যা অনেক বেশি শক্তিশালী। এই ভোল্টেজের বিদ্যুৎ প্রবাহ ৫০ ভোল্টের বেশি হলে আমরা সেটি অনুভব করতে পারি এবং ২২০ ভোল্ট সাপ্লাই থেকে ইলেকট্রিক শক পাওয়া খুবই। এমন শকের কারণে শরীরের মাধ্যমে যথেষ্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে মৃত্যুর সম্ভাবনা পর্যন্ত হতে পারে।
আরো পড়ুনঃশিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার
বাড়িতে বিদ্যুৎ বর্তনীর নকশা বা হাউজ ওয়ারিং
আমাদের প্রায় সবার বাড়িতেই বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এই সংযোগ দেওয়ার আগে, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণের জন্য একটি নকশা তৈরি করতে হয়। বাড়ির বিদ্যুৎ বিতরণের নকশা কেমন হবে, তা সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। বাড়িতে তড়িৎ সংযোগের জন্য সিরিজ বর্তনী উপযোগী নয়, কারণ এতে সুইচ অন করলে একই সাথে সব বাল্ব জ্বলে যাবে এবং সুইচ অফ করলে সব বাল্ব একসাথে বন্ধ হয়ে যাবে। এর চেয়ে বড় সমস্যা হলো, সিরিজে থাকলে কোনো বাল্ব বা ফ্যান যথাযথ ভোল্টেজ পাবে না, কারণ ভোল্টেজ ভাগ হয়ে যায়। তাই, বাড়িতে তড়িৎ সংযোগে সমান্তরাল সংযোগ ব্যবস্থাই সঠিক।
এখন, হাউস ওয়াইরিং এর বিভিন্ন উপাদান যেমন—মেন লাইন কিভাবে সংযুক্ত করা হয়, ফিউজ বা সার্কিট ব্রেকার, মেইন সুইচ, প্লাগ সকেট, ডিস্ট্রিবিউশন বাক্স এবং প্রয়োজনীয় বাতি বা পাখার সংযোগ কিভাবে দেওয়া হবে, এসব বিষয়েও পরিকল্পনা করতে হয়।
বাসায় বিদ্যুৎ প্রবাহের প্রধান তার দুটি—একটি হলো জীবন্ত তার, যা সাধারণত লাল রঙের হয় এবং অন্যটি হলো নিরপেক্ষ তার, যা কালো রঙের হয়। জীবন্ত তারে ২২০ ভোল্ট বিদ্যুৎ ভোল্টেজ থাকে। নিরপেক্ষ তারে তড়িৎ ভোল্টেজ থাকে না, কারণ এটি মাটির সাথে সংযুক্ত থাকে এবং সার্কিট পূর্ণ করে বিদ্যুৎ প্রবাহ নিশ্চিত করে। মেইন তারটি ফিউজ বা সার্কিট ব্রেকার হয়ে মিটারে যায়।
এর মাধ্যমে বাড়িতে কত পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি খরচ হচ্ছে, তা মিটারে লিপিবদ্ধ হয়। মিটার থেকে দুটি প্রধান সুইচের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই সুইচের মাধ্যমে, বাড়ির ভিতরের বিদ্যুৎ প্রবাহ প্রয়োজনমতো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ বা চালু করা যায়। মেইন সুইচ থেকে তার দুটি ডিস্ট্রিবিউশন বক্সে যায়, যেখানে তার দুটি আলাদা শাখা লাইন বিভক্ত হয়ে যায়। প্রতিটি শাখা লাইনের জন্য আলাদা আলাদা ফিউজ বা সার্কিট ব্রেকার থাকে। লাইটের জন্য ৫ অ্যাম্পিয়ার, ফ্যানের জন্য ১০ অ্যাম্পিয়ার, হিটারের জন্য ১৫ অ্যাম্পিয়ার এবং প্লাগ সকেটের জন্য ৩০ অ্যাম্পিয়ার সার্কিট ব্রেকার সংযুক্ত থাকে।
এটি প্রত্যেকটি জীবন্ত তারের সাথে সংযুক্ত এবং প্রতিটি বাতি বা পাখার জন্য আলাদা আলাদা সুইচ সংযোগ করা আছে। বাড়িতে বৈদ্যুতিক ওয়ারিং করার সময়, বাতি বা পাওয়ার সুইচের সব ফিউজ যেন জীবন্ত তারের সাথে সংযুক্ত হয়, সেই দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
তাছাড়া, সমস্ত তার পিভিসি বা অন্য কোনো অপরিবাহী উপাদান দিয়ে সুরক্ষিত করতে হবে। বর্তমানে ওয়্যারিং কেবল সাধারণত দেওয়ালের প্লাস্টারের ভেতর দিয়ে টানা হয়। এছাড়া, সব ধরনের যন্ত্রপাতির জন্য ফিউজ সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। যেমন- ফ্রিজ, টিভি ইত্যাদি যন্ত্রপাতির জন্য উপযুক্ত ফিউজ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। তাছাড়া, প্রয়োজনীয় লোড গ্রহণ করতে সক্ষম কেবল ব্যবস্থাও করতে হবে। তা না হলে বিদ্যুৎ প্রবাহের সময় তার অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে দুর্ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে।
বিদ্যুৎ বিশ্লেষণ বলতে কি বুঝি
যে দ্রবণের মধ্যে বিদ্যুৎ বা তড়িৎ প্রবাহিত করা হয় এবং এর অনুকূল অংশকে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নে বিভক্ত করা হয়, তাকে তড়িৎ বিশ্লেষণ (Electrolysis) বলা হয়। তড়িৎ বিশ্লেষণে যে দ্রবণটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়, তাকে তড়িৎ দ্রব্য বা তড়িৎ বিশ্লেষণ পদার্থ বলা হয়। আগে আমরা দেখেছি যে পরিবাহকের দুই পাশে ব্যাটারি সেল দিয়ে বিভব পার্থক্য তৈরি করলে মুক্ত ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়, যাকে বিদ্যুৎ বা তড়িৎ প্রবাহ বলা হয়।
তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় দ্রবণের মধ্যে কিভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে, তা নির্ভর করে দ্রবণের ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আয়নের মধ্যে বিভাজনের উপর। তড়িৎ বিশ্লেষণে, দ্রবণটি ধনাত্মক আয়ন এবং ঋণাত্মক আয়নে বিভক্ত হয়, এবং এদের প্রবাহের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।
ক্ষার, নিরপেক্ষ লবণ, এসিড, মিশানো পানি ইত্যাদি তড়িৎ বিশ্লেষণ পদার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায়, একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকা প্রোটনের সংখ্যা ইলেকট্রনের সংখ্যার সমান থাকে। কিন্তু, যদি কোন পরমাণু বা যৌগের ইলেকট্রনের সংখ্যা প্রোটনের সংখ্যার চেয়ে বেশি বা কম হয়, তাহলে সেটি আয়ন (ion) হিসেবে পরিচিত হয়। তড়িৎ বিশ্লেষণের সময়, দ্রবণটি ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আয়নে বিভক্ত হয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে।
প্রত্যাহিক জীবনে বিদ্যুৎ বিশ্লেষণের গুরুত্ব
তড়িৎ প্রলেপন: তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি ধাতুর ওপর অন্য কোন ধাতুর প্রলেপ দেওয়াকে তড়িৎ প্রলেপন (Electroplating) বলা হয়। সাধারণত কম দামের ধাতু যেমন তামা, লোহা, ব্রোঞ্জ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রগুলোকে জলবায়ু থেকে রক্ষা করতে বা সুন্দর দেখানোর জন্য সেগুলোর ওপর সোনা, রূপা, নিকেল ইত্যাদি মূল্যবান ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়।
তড়িৎ প্রলেপন প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রথমে প্রলেপ দেওয়ার বস্তুটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে এবং একটি পাত্রে রাখতে হবে। এই পাত্রটি হবে ক্যাথোড (Cathode) যা বিদ্যুৎ দ্বারা প্রলেপিত হবে। যে ধাতুর প্রলেপ দিতে হবে, তাকে অ্যানোড (Anode) বলা হয়। প্রলেপ দেওয়ার জন্য যে ধাতুর দ্রবণ ব্যবহার করা হয়, সেটি সাধারণত ওই ধাতুর লবণযুক্ত দ্রবণ।
এখন, ব্যাটারি বা পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করে অ্যানোড থেকে ক্যাথোডে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে, তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্যাথোডে রাখা ধাতব বস্তুর ওপর মূল্যবান ধাতুর প্রলেপ পড়ে যায়।
তড়িৎ মুদ্রণ: তড়িৎ প্রলেপের একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে হরফ, ব্লক, মডেল ইত্যাদি তৈরি করার প্রক্রিয়াকে তড়িৎ মুদ্রণ বলা হয়। তড়িৎ মুদ্রণের জন্য প্রথমে লেখাটি সাধারণ মোমের ওপর ছাপানো হয়। এরপর এর ওপর কিছু গ্রাফাইট গুড়ো ছিটিয়ে, মোমকে তড়িৎ পরিবাহী করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে, এই প্রস্তুতকৃত বস্তুটি কপার সালফেট দ্রবণে ক্যাথোড হিসেবে ডুবানো হয় এবং তামার একটি পাতকে অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এখন দ্রবণের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহ চলতে শুরু করলে, মোমের ওপর তামারের প্রলেপ পড়তে থাকে। যখন প্রলেপ কিছুটা জমে যায়, তখন এটি ছিঁড়ে বা ঝেঁকে ছাপের কাজে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
আরো পড়ুনঃফাস্ট ফুড এবং ফাস্টফুডের অপকারিতা
ধাতু নিষ্কাশন ও শোধন: প্রকৃতিতে ধাতু সাধারণত বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় না, বরং এগুলো অন্যান্য উপাদানের সাথে মিশ্রিত থাকে, যা আকরিক নামে পরিচিত। তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে আকরিক থেকে সহজে ধাতু নিষ্কাশন এবং শোধন করা সম্ভব। যে আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশন করতে হবে, সেটি অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ধাতু নিষ্কাশনের জন্য সংশ্লিষ্ট ধাতুর লবণের দ্রবণ এবং একটি বিশুদ্ধ ধাতুর পাতকে ক্যাথোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তড়িৎ প্রবাহ চালানোর মাধ্যমে, আকরিক থেকে বিশুদ্ধ ধাতু নিষ্কাশিত হয়ে ক্যাথোডে জমা হয়।
লোডশেডিং বলতে কি বুঝি
প্রত্যেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করে, যা পরে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। এই সাবস্টেশন বা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন এলাকার চাহিদার ভিত্তিতে জাতীয় গ্রিড বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। তবে, যদি কোন এলাকার চাহিদা উৎপাদনের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে সেই এলাকায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে, সাবস্টেশনগুলো এক এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অন্য এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এই প্রক্রিয়াকে লোডশেডিং বলা হয়। যখন সাবস্টেশন আবার প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ পায়, তখন ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় শুরু হয়।
উন্নয়ন কার্যক্রমে বিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার
একটি দেশের উন্নয়ন শক্তির ব্যবহারের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। আসলে, একটি দেশ কতটা উন্নত, তা বুঝতে শক্তির ব্যবহারকে প্রথম মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য প্রথমত শিক্ষার প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত। এই দেশে বিপুল সংখ্যক ছেলেমেয়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঠিকভাবে কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।তাদের পড়াশোনার জন্য রাতে আলোর প্রয়োজন হয়, এবং যদি এটি নিশ্চিত না করা হয়, তবে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার অগ্রগতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্ক সচল রাখতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অপরিহার্য। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে কৃষির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেশের আয়তন ছোট হওয়ার কারণে কৃষি উপযোগী ভূমির পরিমাণ সীমিত, এবং এটি ক্রমেই কমে আসছে। তবে, এই সীমিত কৃষি ভূমিতে দুটি বা ততোধিক ফসল ফলিয়ে আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছে।
এ কারণে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক অবস্থার ওপর নির্ভর না করে, কৃষিতে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে হয় এবং শক্তির সরবরাহ ছাড়া এটি সম্ভব নয়। জমিতে পানি সেচের জন্য পাম্প চালাতে বিদ্যুৎ বা জ্বালানি প্রয়োজন। চাষাবাদের জন্য সারের প্রয়োজন হয়, এবং সার কারখানায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ ছাড়া উৎপাদন সম্ভব নয়। জমি চাষ করতে এবং ফসল প্রক্রিয়া করতে ট্র্যাক্টর ব্যবহার করা হয়, আর কৃষি কার্যক্রমের জন্য যথাযথ জ্বালানী সরবরাহও নিশ্চিত করতে হয়।
কৃষির পর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে শক্তি সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ থাকার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দরকার, এবং বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরি ও বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য শক্তির প্রয়োজন। এছাড়াও, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্যও শক্তি অপরিহার্য। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ কখনোই বন্ধ হতে পারে না, কারণ এক মুহূর্তের জন্যও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে রোগীদের সেবা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
উপসংহার
উপরোক্ত বিষয় থেকে আমরা জানতে পেরেছি, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের ভূমিকা কতটা অপরিহার্য। বিদ্যুৎ ছাড়া আমাদের প্রতিদিনের জীবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে, কারণ আমাদের প্রয়োজনীয় প্রতিটি যন্ত্রপাতি এবং কাজের জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন। এছাড়াও, লোডশেডিং কেন হয় এবং তার সমাধান কী, সেই সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি বিদ্যুৎ শক্তি কী, বিদ্যুৎ প্রবাহ কেমন হয়, কীভাবে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা হয় এবং কোন কাজ বা যন্ত্রপাতির জন্য কত পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন।
Comments
Post a Comment